Home খবরা খবর দু’পা এগিয়ে ট্রাম্প চার’পা পিছোলেন

দু’পা এগিয়ে ট্রাম্প চার’পা পিছোলেন

সুমন চট্টোপাধ‍্যায়

by Suman Chattopadhyay
1 comment 1K views

ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি কাজের কাজ করেছেন অবশেষে। ইরাণ-ইজরায়েল যুদ্ধে আমেরিকা অংশ নেবে কিনা সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও অন্তত দু’সপ্তাহ অপেক্ষা করবেন। ইজরায়েলের অকস্মাৎ একতরফা আগ্রাসনের পরে যে জরুরি প্রশ্নটি কার্যত কবরস্থ হয়ে গিয়েছিল, আবার তা নতুন জীবন পেয়েছে। কূটনৈতিক আলোচনার দরজা তার মানে খুলে গেল নাকি?

ট্রাম্প কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন?
১)নাচার হয়ে। ইজরায়েলের গোয়েন্দা রিপোর্ট অভ্রান্ত কিনা কিংবা নাটকীয়ভাবে এই রিপোর্ট পেশ করে নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনকে কায়দা করে যুদ্ধে জডিয়ে ফেলতে চাইছেন কিনা তা নিয়ে মার্কিন প্রশাসন দ্বিধাবিভক্ত আড়াআড়িভাবে। কেননা ইজরায়েলের গোয়েন্দা রিপোর্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন‍্য কোনও পক্ষই একমত নয়- সি আই এ, এফ বি আই মায় ইন্টারন‍্যাশনাল অ‍্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সির নয়। তাহলে? ইজরায়েল আমেরিকার বন্ধু কিংবা মুৎসুদ্দি দেশ হতে পার। কিন্তু ইরাণের প্রশ্নে তার কায়েমি স্বার্থ এতটাই গভীর যে তেল-আভিভ সত্য-মিথ‍্যা মিলিয়ে পৃথিবীকে বিভ্রান্ত করতেই পারে।
২) মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার গোপন ও কাল্পনিক রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ করে একবার ওয়াশিংটন বিচ্ছিরিভাবে হাত পুড়িয়েছে। যুদ্ধে দুই ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে, একটি রাসায়নিক অস্ত্রও ইরাকের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০২৫ সালে ইরাণ আক্রমনে সেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের পুনরাবৃত্তি হবেনা সেই গ‍্যারান্টি কোথায়?
৩) এবার ক্ষমতায় আসার আগে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অন‍্যতম ছিল, অন‍্য দেশের যুদ্ধে আমেরিকা অংশ নেবেনা। দায়িত্ব নেওয়ার পাঁচ মাসের মাথায় সেই প্রতিশ্রুতি খেলাপ হচ্ছে দেখলে মার্কিন জনমত ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে পারে; ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে তীব্র অসন্তোষও মাথা চাড়া দিতে পারে। এমনিতেই সব বিষয়ে গোঁয়ার্তুমি করতে গিয়ে ট্রাম্প মার্কিন মুলুকে এমন দ্রুতহারে জনপ্রিয়তা খোয়াচ্ছেন যার সমতুল‍্য নজির আমেরিকার ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। ট্রাম্প বদ্ধ-উন্মাদ সন্দেহ নেই। তবু নিজের ভালো তো পাগলেও বোঝে।
৪) একে অন‍্যের যুদ্ধ তায় যুদ্ধ মানেই ঘোরতর অনিশ্চয়তা। আমেরিকার প্রবেশের পথে বাধা নেই, কিন্তু প্রস্থান ঘোরতর অনিশ্চিত। তার চেয়েও অনিশ্চিত ফলাফলের গতি-প্রকৃতি। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের বদলা নিতে ন‍্যাটোর সহযোগীদের নিয়ে জর্জ বুশ যখন আফগানিস্তানে আক্রমণ করলেন, কে ভাবতে পেরেছিল,মার্কিন ফৌজকে কোনোক্রমে কাবুল থেকে পালাতে হবে? আফগানিস্তানে তালিবানদের সহায় ছিল প্রকৃতি, হিন্দুকুশ পর্বতমালার ওই দুর্লঙ্ঘ গিরিপথে তালিবানদের অবস্থান ছিল জলের ভিতরে মাছের মতো। তুলনায় মার্কিন ফৌজ মাউন্টেইন ওয়ারফেয়ারে না ছিল অভ‍্যস্ত না ততটা কার্যকর।
পাহাড়ি যুদ্ধের সমস‍্যা না থাকলেও ইরাণও সুপ্রাচীন সভ‍্যতার দেশ, আয়তনে বিরাট বড়। ইতিহাস বলে আফগানদের দেশাত্মবোধ এতটাই গভীর, কোনও বিদেশি শক্তি,তা যত শক্তিশালী হোকনা কেন, আফগানিস্তানে গিয়ে কেবল নাকানি-চোবানি খেয়েছে। প্রথমে ইংরেজ, তারপরে সোভিয়েত ইউনিয়ন, সবশেষে আমেরিকা। আফগানদের সঙ্গে ইরানিদের একটি মৌলিক বিষয়ে আশ্চর্য মিল। তাঁদের দেশপ্রেম, গর্বের জাতীয়তাবোধ খাটো করে দেখার কোনও অর্থ হয়না। ফলে এই যুদ্ধে নাক-গলিয়ে আমেরিকা আঘাত করলে ইরাণ তার মতো করে প্রত্যাখ্যাত করবেই। সেখানেই সুপ্ত আছে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।
৫) দুনিয়ার স্ব-ঘোষিত বিগ ব্রাদার দুনিয়া জুড়ে অসংখ‍্য দেশে নিজেদের সামরিক ছাউনি তৈরি করে রেখেছে সম্পূর্ণ নিজের স্বার্থরক্ষায়, কখনও যার চালিকাশক্তি অর্থনৈতিক, কখনও আবার দুনিয়ায় নিজেদের ‘স্ফিয়ার অব ইনফ্লুয়েন্স’ ধরে রাখার অমোঘ তাগিদে। বিশ্বের অপরিশোধিত তেলের, সোনার ভান্ডার পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন ছাউনি আছে পাড়ায়- ইরাক, সিরিয়া, তুরস্ক, কাতার,সৌদি আরব, জর্ডন, বাহারিন- কোথায় নেই। ইরাণের প্রত‍্যাঘাতের মুখে এই শিবিরগুলির কোনটা কতটা নিরাপদ বলা কঠিন। সত‍্য হোল নিজের দেশকে সুরক্ষিত রাখার জন‍্য ইজরায়েল শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই নিষ্ক্রিয় করতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে প্রযুক্তিগতভাবে সবচেয়ে উন্নত ব‍্যবস্থা করে রেখেছে। কিন্তু তাতেও সুরক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে কী? ইজরায়েল জুড়ে ইরাণী ক্ষেপণাস্ত্র সেই বজ্র আঁটুনিকে ফাঁকি দিয়ে মাটিতে পড়ছেই। আমেরিকার পশ্চিম এশীয় সেনা শিবিরগুলোর মাথায় তো সমতুল সুরক্ষার চাঁদোয়া নেই। তাহলে? এদের বিরুদ্ধে ইরাণ যদি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তাক করে ছুঁড়তে থাকে তাহলে?
মানে কেসটা অতীব জটিল। নেতানিয়াহু ডুগডুগি বাজাচ্ছেন নিজের স্বার্থে। একদিন অন্তর সরিয়ে নিচ্ছেন এন্ড গেমের গোলপোস্ট। প্রথমে দাবি ছিল ইরাণকে কিছুতেই পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে দেওয়া যাবেনা, তারপর হোল ক্ষেপণাস্ত্র ও নয়, সবশেষে আয়াতোল্লার নিকেশ চাই, চাই প্রায় অর্ধ-শতকের মোল্লাতন্ত্রের আশু অবসান। মামাবাড়ির আবদারের এমন দীর্ঘ তালিকা পূর্ণ হবে এমন দাবিটাই তো অযৌক্তিক, অসার এবং অসম্ভ।

You may also like

1 comment

Suvendu choudhary June 20, 2025 - 8:15 pm

খুব সুন্দর প্রতিবেদন

Reply

Leave a Reply to Suvendu choudhary Cancel Reply

Description. online stores, news, magazine or review sites.

Edtior's Picks

Latest Articles