Home ভুবনডাঙা মরুলোকে নগর-কল্প

মরুলোকে নগর-কল্প

by বাংলাস্ফিয়ার
3 comments

বাংলাস্ফিয়ার

ইতালো কালভিনো-র কালজয়ী পুস্তক ইনভিজিবল সিটিস বা অদৃশ্য জনপদ। বাঙালি ইতালো কালভিনোর এই কাব্যিক উপন্যাসটি বহুল পড়েছে। বাংলাও হয়েছে এর। কুবলাই খানকে মার্কো পোলো-র শহর-বর্ণনা। কল্পিত কথা। সিটি-কথার সমগ্র। বইটা ধুলো ঝেড়ে বার করতে হয়েছিল আপাতত কল্পনায় খেলা করা একটি শহরের কথা পড়ে।

তার নাম, টেলোসা। প্রাচীন গ্রিক থেকে যে শব্দের উৎপত্তি। অর্থ, সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য। যিনি এটি আপাতত কল্পনায় ধারণ করে বাস্তবের মাটিতে নামনোর জন্য ছটফট করছেন, তাঁর নামেও মার্ক আছে তবে পোলো নেই। তিনি মার্ক লোরে। ধনকুবের। তাঁর পরিকল্পনায় উল্লম্ফন করে ওঠা এই শহরটি আমেরিকার কোনও মরুভূমিতে হবে। শূন্যের উপর সাতমহলা তৈরি হবে যেন। হাওয়ায় তৈরি হবে এক দুর্গ। যে শহরের অধিবাস থেকে অন্তর্বাস সব ঠিক হয়ে গিয়েছে প্রায়, শুধু কোথায় হবে সেইটিই এখনও অজানা। তবে নেভাদা, উটা কিংবা অ্যারিজোনা, যে কোনও একটির মরুভূমির উপর পা ছড়িয়ে বসতে পারে টেলোসা। সারা পৃথিবীকে চমকানোর জন্য নিজের সকল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে সফল হবেনই মার্ক, এমনই তাঁর আত্মবিশ্বাস!

ছবি সৌজন্যে : cityoftelosa.com

আসুন, শহর-কথায় একটু বেশি ঢোকার আগে, আমরা মার্ক লোরে সম্পর্কে কিছু বলি। লোরে কিন্তু লড়াকু বিলিওনিয়র। জেট ডট কম নামে ই-কমার্স তৈরি করে সাড়া ফেলেছিলেন। সেই সংস্থাটি বিক্রি করে দেন ওয়ালমার্টকে, ২০১৬-র সেপ্টেম্বরে। এ বাবদ তিনি পান ৩.৩ বিলিয়ন ডলার। ওয়ালমার্ট ই-কমার্সের সিইও-ও হন। উল্লিখিত অর্থের অঙ্ক শুনে ঘোরে ডুবে যাবেন না। আরও ঘটনা আছে। আগে ও পরে। কারণ নামটা যে মার্ক লোরে! ২০১০ সালে তিনি অ্যামাজনের কাছে ৫৪৫ মিলিয়ন ডলারে বেচেন তাঁর তৈরি সংস্থা ডায়পার্স ডট কমের পেরেন্ট সংস্থা কাদসি-কে। কাট টু ২০২১। তিনি ওয়ালমার্টের সিইও-র চেয়ার থেকে ইস্তফা দিয়ে মরুভূমিতে শহর গড়া লক্ষ্য নিয়েছেন। ওয়ান্ডার গ্রুপ নামে এক সংস্থাও তৈরি করেছেন। যা হল একটি চলতা-ফিরতা রান্নাঘর। ঘরে ঘরে রান্না করা খাবার পৌঁছানোর ট্রাক-ব্যবস্থা।

টেলোসা সম্পর্কে কী জানা গিয়েছে? ১ লক্ষ ৫০ হাজার একর জমিতে এই শহর নির্মাণের পরিকল্পনা। বাস করতে পারবেন ৫ মিলিয়ন লোক। প্রকৃতির গায়ে এ শহর ক্ষত তৈরি করবে না এক ছিঁটে। হাইপারমর্ডান। তৈরির ডেডলাইন তারা স্থির করেছেন ২০৩০ সাল। লোরে অবশ্য দার্শনিকতার মিশেলও দিয়েছেন। বলেছেন, আমরা কোনও নতুন শহর তৈরি করতে যাচ্ছি না। আমরা সমাজের নতুন একটি মডেল তৈরি করতে চলেছি। যে সমাজে সবার জন্য অধিকার সমান। ইকুইটিজমের কথা বলেন। যার মানেটা খানিক, গণতন্ত্র, পুঁজিবাদ এবং সাম্যবাদ এই তিনটির মিশেল। কার্ল মার্ক্স নিশ্চয়ই এ শহরের মাথায় ফুল বর্ষাবেন। যদি কথা ও কাজের মিল থাকে!

হ্যাঁ, আরও আছে। সংক্ষেপে সারতে হবে। টেলোসায় থাকবে ৩৬টি জেলা। সব কিছুই পাওয়া যাবে হাত বাড়ালে। জীবাশ্ম তেলের কোনও চিহ্ন থাকবে না সেখানে। সব চলবে মূলত সোলার শক্তির জোরে। নানা বাড়ির নানা ছাদই সেই শক্তি উৎপাদনের কেন্দ্র। জলের কোনও অভাব থাকবে না। ওয়েস্ট ওয়াটার ও সমুদ্রের জল এনে প্রযুক্তির জাদুতে তা হবে। ইতিমধ্যেই শহরটি ডিজাইনের জন্য বাঘা বাঘা লোকজনকে কাজে বহাল করেছেন লোরে। এর মধ্যে তাঁর ছোটবেলার বন্ধু প্রিট ভারারাও রয়েছে। যিনি নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের প্রাক্তন ইউএস অ্যাটর্নি।

ছবি সৌজন্যে : cityoftelosa.com

এ জাতীয় শহর তৈরির পরিকল্পনা কিন্তু মোটেই নতুন নয়। সৌদি আরবের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন দ্য লাইন নামে একটি মেগাসিটি তৈরি করছেন। সেই শহরটার দৈর্ঘ্য ১০৫ মাইল, তবে প্রস্থ বেশ কম—৬৬০ ফুটের কিছু বেশি। ২০৩০ সালের মধ্যে এই শহরে ১.৫ মিলিয়ন মানুষ থাকতে পারবেন। রয়েছে আরও। যেমন, মলদ্বীপের ভাসমান শহর, টোয়োটা ওভেন সিটি, ম্যাসডার সিটি ইত্যাদি। ধনকুবের বিল গেটসও এমন একটি স্বপ্ন দেখেন, অ্যারিজোনার মরুভূমি শহর তৈরি তাঁর প্ল্যান। নাম হবে, বালমন্ট। বিশ্বের এক নম্বর ধনী এলন মাস্কও এই পথের পথিক হতে চান। মনে হয়, ইতিহাসে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখার লক্ষ্যে এটাই বোধ হয় সবচেয়ে দুরন্ত ব্যবস্থা। যে শহরের যিনি পরিকল্পক, সেই নগরের পথেপথে হবে তাঁরই জয়ধ্বনি, থাকবে তাঁরই মূর্তি। আগামীর কোল কিছুতেই তাঁকে ভুলতে পারবে না, তাই না!

কিন্তু যদি কথার কথাই থেকে যায়। তা হলে তো হায় হায়!

যা হোক, ইনভিজিবল সিটিস-এর পাতা ওল্টাতে ওল্টোতে এক জায়গায় চোখ আটকায়: ‘যে আগামী অসফল, তা আসলে অতীতের শাখা: মৃত শাখাপ্রশাখা’। টেলোসার শাখায় ফুল ফুটবে, কচি পাতা মাথা দোলাবে, আশায় আশায় থাকতে মন্দটাই বা কি!

You may also like

3 comments

Jyoti Prakash Saha September 14, 2022 - 3:31 pm

বেশ। আশায় র‌ইলাম। জানি না ২০৩০ সাল অবধি বাঁচবো কিনা !

Reply
Nupur Chaudhuri September 14, 2022 - 6:45 pm

‘টেলোসা’র স্বপ্ন ফলপ্রসূ হো’ক।
যদি না ‘ ওপরে’ চলে যাই ( মহামারি তো মৃত্যুর হিসেব সব উল্টে দিয়েছে) , তাহলে আশা করা যায় ‘৩০ -এর– ‘ মরুবিজয়ের কেতন’ ওড়া চাক্ষুষ করতে পারবো টিভি বা সেই সময় আরও উন্নত কোনো প্রযুক্তি যদি আসে তার মাধ্যমে।

Reply
Partha Chakraborty September 16, 2022 - 12:08 pm

Basinda hote hole mal Kari kirokom phelte hobe?

Reply

Leave a Comment

Description. online stores, news, magazine or review sites.

Edtior's Picks

Latest Articles

All Right Reserved.