Home সবার ওপরে জন্ম সত্য

সবার ওপরে জন্ম সত্য

0 comments 12 views

নিরানন্দর জার্নাল (১২)

সবার ওপরে জন্ম সত্য

সুমন চট্টোপাধ্যায়

আজ সঙ্ঘমিত্রার জন্মদিন।

সঙ্ঘমিত্রা রায়চৌধুরী দাশগুপ্ত। এত বড় নাম আর পদবী কী করে চেকের তলায় আঁটায় কে জানে।

যেমন জানি না, সঙ্ঘমিত্রার বয়স আজ কত হলো। দুই কুড়ি প্লাস কিছু একটা হবে। মেয়েদের বয়স জানতে চাওয়াটা ইতরামি বলে ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি। এই বুড়ো বয়সে তেমন অসভ্য আস্পর্ধা দেখাচ্ছি না।

সঙ্ঘমিত্রার সঙ্গে আমার আলাপ এই ফেসবুকেই। ওর বাংলা লেখার শৈলীতে চমৎকৃত হয়ে জানতে চেয়েছিলাম, আপনি কী করেন? জবাবে যা শুনলাম, তা ব্যোমকে দেওয়ার মতো। রাজ্য সরকারের সমবায় দপ্তরের অডিটর। শহরে চক্কর কেটে সমবায়গুলির হিসেব-নিকেশ পরীক্ষা করেন।

শুনে আমার বাবার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। বাবা পড়তে চেয়েছিলেন ইংরেজি সাহিত্য, ভাগ্যের বিড়ম্বনায় ইতিহাস পড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। সারাটা জীবন ধরে বাবাকে আক্ষেপ করতে শুনেছি, ‘অল মাই লাইফ, আই হ্যাভ ক্যারেড আদার ম্যানস বার্ডেন।’ সারাটা জীবন ধরে আমি অন্যের বোঝা নিজের কাঁধে বয়ে বেড়ালাম।

আমি নিশ্চিত, সঙ্ঘমিত্রারও নিশ্চয়ই একই কারণে দীর্ঘঃশ্বাস পড়ে। সাহিত্য-চর্চা, নিদেন পক্ষে সাংবাদিকতা করলে যে মেয়ে নির্ঘাৎ সুনামের হকদার হত সে কি না অন্যের খাতায় যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ দেখে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে। জ্যাঠাবাবুর মতো এ জন্য আমি ওকে কম ভ্যর্ৎসনা করিনি, পরে তার জন্য আমার নিজেরই খারাপ লেগেছে। সত্যিই তো নিয়তির লিখন খণ্ডাবে কে?

সঙ্ঘমিত্রা অতএব দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে এই ফেসবুকে নিয়মিত লেখে। একা ও নয়, আরও বেশ কয়েকজন দুর্ধর্ষ লেখকের লেখার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে এই দেওয়ালেই। এদের নাম আগে শুনিনি, লেখার সঙ্গে পরিচিতির তো প্রশ্নই নেই। ফেসবুকে এদের ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা, ফ্যান-ফলোয়ার অগুন্তি। আমি এদের নাম দিয়েছি ‘ফেসবুক গেরিলাজ’।

‘গোবরে পদ্মফুল’-ও দিতে পারতাম। সাধারণত ঘুঁটেতে ভর্তি থাকে এই দেওয়াল, দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চাপা দিতে হয়, মনে হয় যেন কর্পোরেশনের ভ্যাটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। মানসিক বিকারগ্রস্ত, ‘ল্যালোচেজিয়া’-য় আক্রান্ত লোকেদের ছড়াছড়ি, অন্যকে অনর্থক গালাগাল দিয়ে যারা আত্মরতির সুখ অনুভব করে। এই পাগল-ছাগল-রামছাগলের ভিড়েই আবার এমন বেশ কয়েক জনের দেখা পাই, যাদের লেখা পড়ার জন্য আমি উন্মুখ হয়ে থাকি, যেমন সাবিনা ইয়াসমিন, যেমন বেবি সাউ যেমন সঙ্ঘমিত্রা রায়চৌধুরী। তালিকায় আরও অনেক নাম আছে, এই মুহূর্তে এই ব্রহ্মচারীর কেবল এই তিন নারীর কথা মনে পড়ল।

সঙ্ঘমিত্রা তুলনামূলক সাহিত্য নামক আধি-ভৌতিক, আদি-দৈবিক বিষয় নিয়ে পড়াশুনো করেছে। এ কাজ করতে সাহস লাগে কেন না এই বিষয়ে ডিগ্রির এখনও সর্বজনিক স্বীকৃতি নেই। এইটুকু বাহুল্য বাদ দিলে লেখক সঙ্ঘমিত্রার আর কোনও খামতি নেই। ভাষা খাসা, দেখার নিজস্ব চোখ আছে, আছে নিজস্ব মূল্যবোধ আর জীবনবোধ, আছে নিজস্ব জীবনদর্শনও। মতামতের প্রশ্নে সঙ্ঘমিত্রা নির্ভীক, শালগাছের মতো ঋজু। কবিতার মগ্ন-পাঠক, বাচিক-শিল্প নামের যে অদ্ভুতুড়ে শিল্প এখন বাজারে খুব খাচ্ছে সঙ্ঘমিত্রা তাতেও পারদর্শী। ওর নিজের একটা দল ছিল, এখনও আছে কি না জানি না।

আজ সকালে হোয়াটসঅ্যাপে আমি ওকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছি, ‘আশা করি, আগামী বছরেও এই দিনে তোকে শুভেচ্ছা জানাতে পারব।’ এই মৃত্যু-উপত্যকায় দাঁড়িয়ে এক বছরের আয়ু প্রার্থনাটুকুই যেন অনেক মনে হয়।

Leave a Comment

Description. online stores, news, magazine or review sites.

Edtior's Picks

Latest Articles

All Right Reserved.