প্রত্যাশিত অঘটনটি ঘটে গেল। গোলার্ধের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ যখন নিদ্রামগ্ন মহাবীর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে আমেরিকার একঝাঁক বি-টু যুদ্ধ বিমান তখন চুপিসারে ইরানের তিনটি পরমানু পরীক্ষা কেন্দ্রের ওপর দানবীয় বোমা বাঙ্কার বাস্টার ফেলে নিরাপদে ফিরে এসেছে। পরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া সংক্ষিপ্ত ভাষনে মস্তানির ভাষায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট রীতিমতো শাসানি দিয়েছেন ইরানকে।
এবার হয় আলোচনার টেবিলে এস নয়তো চরম সর্বনাশের জন্য তৈরি হও।
গত ৪৬ বছর ধরে শাসানি শুনতে শুনতে তিতি বিরক্ত ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনেই ট্রাম্পের ভাষাতেই তাঁকে জবাব দিয়েছেন। এই হামলাকে “অপরাধ” হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, এর “গভীর ও অপূরণীয় পরিণতি” হবে। তিনি স্পষ্টভাবে জানান, তেহরান আত্মসমর্পণ করবে না, আমেরিকা ও ইসরায়েলকে “তিক্ত ও যন্ত্রণাময় পরিণতির” জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল আবুলফজল শেকারচি বলেন, এই আগ্রাসনের খেসারৎ আমেরিকাকেই দিতে হবে।
ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (AEOI) জানায়, হামলার পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল বলে ফোর্ডো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের পারমাণবিক স্কেন্দ্রগুলি আগেই খালি করে ফেলা হয়। ফলে রেডিয়েশনের ঝুঁকি নেই, দেশের পারমাণবিক কর্মসূচিও অক্ষত রয়েছে।
এই দাবি সত্য হলে আমেরিকা-ইরানের যুগলবন্দীর নিট ফল হবে শূন্য। তবে এই দাবির সারবত্তা নিয়ে এই মুহূর্তে বিতর্ক করা অর্থহীন। এখন গোটা দুনিয়ার মানুষ দুরু দুরু বুকে অপেক্ষা করে আছে ইরানের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য। সত্যিই কী ইরান পাল্টা মারের হিম্মত দেখাবে? এখনও কি তার সেই কলজের জোর আছে?
কী পরিণতি হতে পারে?
আন্তর্জাতিক আইনের ভাষা ব্যবহার করে তেহরান বলছে, এটা আত্মরক্ষার অধিকার।
সামরিক উত্তেজনা অনেকটাই বেড়ে গেছে, বিশেষত আইআরজিসি (IRGC) সরাসরি পাল্টা জবাবের হুমকি দেওয়ায়।
: ইরান দেশবাসীকে দেখাতে চাইছে তারা নত হয়নি, ধৈর্য ও প্রত্যয়ের সঙ্গে পরিস্থিতি সামলেছে, যাতে সাধারণ জনগণের ক্ষয়ক্ষতি না হয়।
🔥 সারসংক্ষেপ
হ্যাঁ, ইরানের প্রতিক্রিয়া একাধারে সরকারি, এবং কঠোর। তারা এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে, সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে এবং প্রকাশ্যে পাল্টা জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
সামরিক সংঘর্ষের ঝুঁকি
আমেরিকাকে উচিত শিক্ষা দিতে চাইলে ইরান পশ্চিম এশিয়ার বিবিধ দেশে যে সব মার্কিন সামরিক শিবির আছে সেগুলি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে পারে। একবার তা হলে এই দ্বিপাক্ষিক যুদ্ধ ভিন্ন মাত্রা পাবে, ইরাক ও আফগানিস্তানের পুনরাবৃত্তি হওয়াও অসম্ভব নয়। এই অঞ্চলে এখন কম করে ১৭ হাজার মার্কিন সেনা আছে যাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গত উদ্বেগ থাকবে।
ইরান প্রত্যাঘাত করলে এ তল্লাটে তাদের মদতপুষ্ট যতগুলি জঙ্গি সংগঠন আছে তাঁদেরও ফের সক্রিয় করার চেষ্টা চালানো হবে। যেমন লেবাননে হেজবোল্লা বা ইয়েমেনের হাউথিরা। গাজায় দীর্ঘ যুদ্ধের পরেও হামাস নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি, তবে আপাতত তারা মাজা ভাঙ্গা অবস্থায়। আমেরিকা বা ইজরায়েলের বড় ক্ষতি করার সামর্থ এদের নেই। কিন্তু ছুটকো ছাটকা আক্রমণ শানিয়ে তারা প্রতিপক্ষকে ত্রস্ত রাখার ক্ষমতা ধরে এখনও।
সামুদ্রিক বানিজ্যে পদে পদে এরা ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে অচলাবস্থা তৈরি করতে পারে।
তেলের বাজারে ধাক্কা
সমুদ্রপথে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য হরমুজ প্রণালীর গুরুত্ব অপরিসীম।ইরান ইতিমধ্যেই হুমকি দিয়ে রেখেছে পরিস্থিতি তেমন দাঁড়ালে তারা জলে মাইন পেতে তেল চলাচলের চালু ব্যবস্থাটি বন্ধ করে দেবে। দুনিয়ায় মোট উৎপাদিত তেলের অন্তত ২০ শতাংশ হরমুজ দিয়ে চলাচল করে।
তেল সরবরাহ টালমাটাল হওয়ার অর্থ বিশ্বব্যাপী মন্দার ঝুঁকি:। অনেক বিশেষজ্ঞ এখনই চেতাবনী শোনাচ্ছেন সেক্ষেত্রে তেলের দাম ব্যারেল পিছু $১৫০ ছাড়িয়ে গেলে বিস্ময়ের অবকাশ থাকবেনা। বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি এবং মন্দা শুরু হতে পার।বিশেষ করে ভারতের মতো আরও অসংখ্য দেশ যারা তেল আমদানির ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল তাদের মাথায় হবে বজ্রপাত।
পারমাণবিক কর্মসূচির গতি বৃদ্ধি
দীর্ঘদিন ধরে ইরান পরমাণু অস্ত্র সংবরণ চুক্তির এক স্বাক্ষরকারী দেশ। এবার এই পরিণতি দেখার পরে ইরান আর এন পি টি-র আওতায় থাকবে বলে লে মনে হয়না। তখন তারা সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে এগোতে পারে। যেভাবে এগিয়েছে ইজরায়েল, ভারত এবং পাকিস্তান।
মোটের ওপর এতৎসত্ত্বেও ইরানের প্রত্যয় নষ্ট হবেনা, তাদের জেদ আরও বেড়ে যাবে। চিন অথবা রাশিয়া সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে।
কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক নিন্দা: ইজরায়েলের পথে এগিয়ে আমেরিকা একতরফাভাবে ইরানে হামলা চালানোর পরে ইউরোপসহ অনেক মিত্র দেশও এর নিন্দা করবে প্রকাশ্যে।
চীন ও রাশিয়ার সমর্থন: তারা ইরানকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহায়তা দিতে পারে,
সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি
হামলার হুমকি বৃদ্ধি: আমেরিকা এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি বাড়বে, বিশেষ করে ইরান-ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীদের মাধ্যমে। সাইবার হামলার আশঙ্কাও থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে ইরানে হামলা চালাল তা আমেরিকার গণতান্ত্রিক প্রথা ও রীতি-নীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী । এমনিতেই নানা কারণে মার্কিন অভ্যন্তরীন পরিস্থিতি এখন তেতে আছে। যুদ্ধ এখানেই থেমে গেলে ট্রাম্পকে হয়ত ততটা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হবেনা। কিন্তু উল্টোটা হলে ঘরের মাঠেই প্রবল বিদ্রোহ অবশ্যম্ভাবী।
সেনা মোতায়েন: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমেরিকাকে পুনরায় পশ্চিম এশিয়ায় স্থলবাহিনী পাঠাতে হতে পারে। প্রবল বিক্ষোভের শলতের অগ্নিমুখ হতে তখন আর দেরি হবেনা এতটুকু।
1 comment
পরিণতি হতে পারে বি়ে। সারসংক্ষেপহ্যাঁ বেরিনে প্রতিক্রিয়া একাধারে সরকারি করেছে। সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে এবং প্রকাশ্যে পাল্টা জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। সামরিক সংঘর্ষের ঝুঁকি আশে দিয়েছে? WordAiApi